মানকিপক্স একটি জুনোটিক ভাইরাসজনিত রোগ, যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয় এবং সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে একটি উদ্বেগজনক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ১৯৭০ সালে প্রথম মানব সংক্রমণের রেকর্ড করা হলেও, এটি বিশেষ করে মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে সাধারণ ছিল। মানকিপক্সের লক্ষণগুলো গুটি বসন্তের মতো হলেও এটি তুলনামূলকভাবে কম মারাত্মক। সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, লসিকা গ্রন্থির ফোলা এবং শরীরে ফুসকুড়ি, যা পরে পুঁজভর্তি ফোসকা এবং ক্ষতের রূপ নেয়। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি, সংক্রমিত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা, এবং টিকার মাধ্যমে এই রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
Table of Contents
১. মানকিপক্স কি?
- সংজ্ঞা: মানকিপক্স একটি ভাইরাসজনিত জুনোটিক রোগ, অর্থাৎ এটি প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। এটি মানকিপক্স ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট, যা অর্থোপক্সভাইরাস (Orthopoxvirus) প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত, যেমনটি গুটি বসন্ত (smallpox) ভাইরাস।
- ইতিহাস: প্রথম ১৯৫৮ সালে বানরের মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছিল এবং ১৯৭০ সালে কঙ্গোতে প্রথম মানব সংক্রমণ ঘটে।
- অঞ্চল: প্রধানত মধ্য এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে দেখা যায়, তবে বিশ্বব্যাপী অন্যান্য এলাকায়ও এর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, যেমন ইউরোপ, আমেরিকা এবং এশিয়া।
২. কি ধরণের রোগ?
- শ্রেণীবিভাগ: এটি একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যা মানব এবং পশু উভয়কেই আক্রান্ত করতে পারে।
- সংক্রমণ পদ্ধতি: সংক্রামিত ব্যক্তি বা প্রাণীর সাথে সরাসরি সংস্পর্শ, শারীরিক তরল, ত্বকের ক্ষত, দূষিত পৃষ্ঠ বা শ্বাসের ড্রপলেটের মাধ্যমে এটি ছড়ায়।
৩. মানকিপক্সের লক্ষণগুলো
- সংক্রমণের লক্ষণগুলো সাধারণত ৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে দেখা দেয় এবং ২ থেকে ৪ সপ্তাহ স্থায়ী হয়। প্রধান লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:
- প্রাথমিক লক্ষণ (০-৫ দিন):
- জ্বর
- মাথাব্যথা
- পেশী ও পিঠে ব্যথা
- লসিকা গ্রন্থির ফোলা (Lymphadenopathy)
- ঠাণ্ডা লাগা এবং ক্লান্তি
- চামড়ায় ফুসকুড়ি: সাধারণত জ্বরের ১-৩ দিন পরে ফুসকুড়ি দেখা যায়, যা মুখ, হাত, পা, মুখগহ্বর ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে হতে পারে।
- ফুসকুড়ি প্রথমে ফ্ল্যাট দাগ (ম্যাকুল) থেকে শুরু হয়ে ফোঁড়া, ফোস্কা এবং পরে পুঁজ ভর্তি ফোসকায় রূপান্তরিত হয়।
- অন্যান্য লক্ষণ:
- গলা ব্যথা
- কাশি
- শ্বাসকষ্ট (মারাত্মক ক্ষেত্রে)
- প্রাথমিক লক্ষণ (০-৫ দিন):
৪. মানকিপক্স থেকে বাঁচার উপায়
- সংক্রমিত ব্যক্তি বা প্রাণীর সাথে সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন: শরীরের তরল, ত্বকের ক্ষত এবং শ্বাসের ড্রপলেট থেকে দূরে থাকুন।
- রক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করুন: স্বাস্থ্যসেবা কর্মী বা আক্রান্ত ব্যক্তির যত্ন নেওয়ার সময় গ্লাভস, মাস্ক এবং গাউন ব্যবহার করুন।
- ভালো স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন: সাবান ও পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুয়ে নিন বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
- বন্য প্রাণীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন: বন্য প্রাণীদের হাতল করার সময় সতর্ক থাকুন, বিশেষ করে যেগুলো ভাইরাসের বাহক হতে পারে।
- দূষিত উপকরণের নিরাপদ ব্যবহার: সংক্রামিত বস্তু এবং পৃষ্ঠগুলি পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করুন।
- টিকা: গুটি বসন্তের টিকা মানকিপক্সের বিরুদ্ধে কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।
৫. চিকিৎসা
- নির্দিষ্ট কোনো প্রতিকার নেই: মানকিপক্সের কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, তবে মারাত্মক ক্ষেত্রে টেকোভিরিম্যাট (tecovirimat) ব্যবহার করা যেতে পারে।
- সহায়ক চিকিৎসা: আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাপোর্টিভ কেয়ার প্রদান করা হয়, যেমন পানি, পুষ্টি এবং সেকেন্ডারি সংক্রমণ রোধে চিকিৎসা।
- হাসপাতালে ভর্তি: মারাত্মক ক্ষেত্রে, রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হতে পারে, যাতে সঠিক আইসোলেশন এবং চিকিৎসা করা যায়।
৬. রোগের প্রভাব
- মানকিপক্স সাধারণত ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই নিরাময় হয়। মৃত্যুর হার ভাইরাসের ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়, তবে এটি সাধারণত গুটি বসন্তের তুলনায় কম। তবে, জটিলতা ঘটতে পারে, বিশেষ করে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যক্তিদের মধ্যে।
সারসংক্ষেপ
মানকিপক্স হলো একটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, যা প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। এর প্রধান লক্ষণগুলো হলো জ্বর, লসিকা গ্রন্থির ফোলা, এবং চামড়ার ফুসকুড়ি। সংক্রমণ এড়াতে সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করা এবং টিকা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
You must be logged in to post a comment.