এসএসসি জীববিজ্ঞান সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ২০২৬

এসএসসি জীববিজ্ঞান সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ২০২৬: অধ্যায়ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ আলোচনা ও প্রস্তুতি

২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য শুভকামনা! তোমাদের প্রস্তুতির পথকে আরও সহজ ও গোছানো করতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB) প্রকাশ করেছে পুনর্বিন্যাসকৃত সংক্ষিপ্ত সিলেবাস। তোমাদের সুবিধার জন্য আমরা এসএসসি জীববিজ্ঞান সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ২০২৬ (বিষয় কোড: ১৩৮) এর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসটি অধ্যায়ভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা করছি। এই সিলেবাস অনুযায়ী, তত্ত্বীয় অংশে ৭৫ নম্বর এবং ব্যবহারিক অংশে ২৫ নম্বর থাকবে । সঠিক পরিকল্পনা মাফিক প্রস্তুতি নিলে जीवবিজ্ঞানে এ+ পাওয়া মোটেও কঠিন নয়।

চলো, দেখে নেওয়া যাক কোন কোন অধ্যায় থাকছে এবং প্রতিটি অধ্যায় থেকে কী কী পড়তে হবে।


এসএসসি জীববিজ্ঞান সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ২০২৬- অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা

এখানে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু তুলে ধরা হলো, যা তোমাদের পড়তে হবে।

অধ্যায় ১: জীবন পাঠ

এই অধ্যায়টি জীববিজ্ঞানের ভিত্তি তৈরি করে। এখান থেকে তোমরা জীববিজ্ঞানের মৌলিক ধারণা পাবে।

  • প্রধান বিষয়বস্তু:
    • জীববিজ্ঞানের ধারণা ও এর প্রধান শাখাগুলো (যেমন: Zoology, Botany, Microbiology ইত্যাদি) সম্পর্কে জানতে পারবে ।
    • জীবের শ্রেণিবিন্যাস, এর প্রয়োজনীয়তা এবং বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে পড়বে ।
    • দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি, এর নিয়মাবলী ও গুরুত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখবে ।

অধ্যায় ২: জীবকোষ ও টিস্যু

জীবদেহ যে কোষ দ্বারা গঠিত, সেই কোষ এবং কোষের সমষ্টি টিস্যু সম্পর্কে বিস্তারিত রয়েছে এই অধ্যায়ে।

  • প্রধান বিষয়বস্তু:
    • উদ্ভিদ ও প্রাণিকোষের প্রধান অঙ্গাণুগুলোর গঠন ও কাজ (ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের আলোকে) ।
    • উদ্ভিদ ও প্রাণিকোষের মধ্যেকার মিল ও অমিল ।
    • বিভিন্ন প্রকার টিস্যু যেমন— সরল টিস্যু (প্যারেনকাইমা, কোলেনকাইমা, স্ক্লেরেনকাইমা) এবং জটিল টিস্যু (জাইলেম, ফ্লোয়েম) এর বর্ণনা ।
    • প্রাণিটিস্যুর প্রকারভেদ— আবরণী, যোজক, পেশি এবং স্নায়ু টিস্যুর গঠন ও কাজ ।
    • অঙ্গ ও তন্ত্রের ধারণা এবং এর গুরুত্ব ।
    • ব্যবহারিক: অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পেঁয়াজের কোষ ও মুখের ভেতরের আবরণী কোষ পর্যবেক্ষণ ও চিহ্নিত চিত্র অঙ্কন ।

অধ্যায় ৩: কোষ বিভাজন

জীবের বৃদ্ধি ও প্রজননের মূলে রয়েছে কোষ বিভাজন। এই অধ্যায়টি তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ।

  • প্রধান বিষয়বস্তু:
    • কোষ বিভাজনের ধারণা ও এর প্রকারভেদ (মাইটোসিস ও মায়োসিস) ।
    • মাইটোসিস কোষ বিভাজনের বিভিন্ন পর্যায় ও এর গুরুত্ব ।
    • মিয়োসিস কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া এবং জনন কোষ সৃষ্টিতে এর তাৎপর্য ।

অধ্যায় ৪: জীবনীশক্তি

জীব তার যাবতীয় কাজ সম্পাদনের জন্য শক্তি কোথা থেকে পায়, তা নিয়েই এই অধ্যায়।

  • প্রধান বিষয়বস্তু:
    • জীবনীশক্তি ও শক্তির উৎস হিসেবে ATP-এর ভূমিকা ।
    • সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া, এতে ক্লোরোফিল ও আলোর ভূমিকা এবং অন্যান্য প্রভাবক সম্পর্কে আলোচনা ।
    • শ্বসন প্রক্রিয়া, সবাত ও অবাত শ্বসনের মধ্যে পার্থক্য ও গুরুত্ব ।
    • ব্যবহারিক: সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিল ও আলোর অপরিহার্যতা নির্ণয়ের পরীক্ষা এবং শ্বসন প্রক্রিয়ায় তাপ নির্গমনের পরীক্ষা ।

অধ্যায় ১১: জীবে প্রজনন (আংশিক)

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই অধ্যায়ের শুধুমাত্র উদ্ভিদ প্রজনন অংশটি সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত। মানব প্রজনন সম্পর্কিত অংশটি পাবলিক পরীক্ষার জন্য বাদ দেওয়া হয়েছে

  • প্রধান বিষয়বস্তু:
    • জীবের প্রজননের ধারণা ও এর গুরুত্ব ।
    • প্রজনন অঙ্গ হিসেবে ফুলের বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ ।
    • সপুষ্পক উদ্ভিদের যৌন প্রজনন এবং জীবনচক্র ।
    • ব্যবহারিক: একটি আদর্শ ফুলের বিভিন্ন স্তবক পর্যবেক্ষণ ।

অধ্যায় ১২: জীবের বংশগতি ও জৈব অভিব্যক্তি

কীভাবে বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সঞ্চারিত হয় এবং পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটেছে, তা এই অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয়।

  • প্রধান বিষয়বস্তু:
    • বংশগতির ধারক ও বাহক— ক্রোমোজোম, ডিএনএ (DNA), আরএনএ (RNA) এবং জিনের বর্ণনা ।
    • ডিএনএ অনুলিপন (Replication) এবং বংশগতির তথ্য স্থানান্তর প্রক্রিয়া ।
    • ডিএনএ টেস্ট ও এর প্রয়োজনীয়তা, মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণে পুরুষের ভূমিকা ।
    • জেনেটিক ডিসঅর্ডার বা বংশগতীয় রোগ (বর্ণান্ধতা ও থ্যালাসেমিয়া) এর কারণ ও ফলাফল ।
    • জৈব অভিব্যক্তি বা বিবর্তন সম্পর্কিত ধারণা এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ ।

অধ্যায় ১৩: জীবের পরিবেশ

পরিবেশে জীব কীভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল এবং টিকে থাকে, তা এই অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।

  • প্রধান বিষয়বস্তু:
    • বাস্তুতন্ত্র, এর উপাদান (জীব ও জড়) এবং তাদের আন্তঃসম্পর্ক ।
    • খাদ্য শৃঙ্খল (Food Chain) ও খাদ্য জাল (Food Web) ।
    • বাস্তুতন্ত্রে শক্তির প্রবাহ এবং শক্তি পিরামিড ।
    • জীববৈচিত্র্য, এর প্রকারভেদ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এর গুরুত্ব ।
    • পরিবেশ সংরক্ষণ পদ্ধতি ও এর প্রয়োজনীয়তা ।

ব্যবহারিক (Practical) অংশ

তত্ত্বীয় অংশের পাশাপাশি ব্যবহারিক প্রস্তুুতিও জরুরি। তোমাদের জন্য নির্ধারিত ব্যবহারিকগুলো হলো:

  1. অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে উদ্ভিদকোষ (পেঁয়াজ) ও প্রাণিকোষ (মানুষের গালের কোষ) পর্যবেক্ষণ ও চিত্রাঙ্কন ।
  2. সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিল ও আলোর অপরিহার্যতা প্রমাণ করা ।
  3. শ্বসন প্রক্রিয়ায় তাপ নির্গমনের পরীক্ষা ।
  4. ফুলের বিভিন্ন স্তবক পর্যবেক্ষণ ।

আশা করি, এই অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা তোমাদের জীববিজ্ঞান প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে। প্রতিটি অধ্যায়ের মূল বিষয়বস্তু ভালোভাবে বুঝে পড়লে এবং ব্যবহারিক কাজগুলো মনোযোগ দিয়ে করলে পরীক্ষায় সাফল্য নিশ্চিত।