এসএসসি ২০২৬ গণিত সিলেবাস

এই ব্লগ পোস্টে আমরা এসএসসি ২০২৬ গণিত সিলেবাস নিয়ে পরীক্ষার্থীদের জন্য (বিষয় কোড: ১০৯, পূর্ণ নম্বর: ১০০) বিস্তারিত সিলেবাস এবং প্রতিটি অংশের জন্য কার্যকর প্রস্তুতি কৌশল নিয়ে আলোচনা করব, যা তোমাদের পরীক্ষায় ভালো করতে সহায়তা করবে।

এসএসসি ২০২৬ গণিত সিলেবাস: সহজ কৌশল ও পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি

ক) বীজগণিত অংশ: সংখ্যা ও রাশির বিশ্ব – এসএসসি ২০২৬ গণিত সিলেবাস

বীজগণিত গণিতের একটি মৌলিক শাখা, যা সংখ্যা, চলক এবং গাণিতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করে। এই অংশে ভালো দখল থাকলে গণিতের অন্যান্য শাখায়ও ভালো করা সহজ হয়।

  • অধ্যায়-২: সেট ও ফাংশন: এই অধ্যায়ে তোমরা সেট (Set) কী, সেটের প্রকারভেদ (যেমন: সসীম সেট, অসীম সেট, ফাঁকা সেট), সেটের বিভিন্ন প্রক্রিয়া (যেমন: সংযোগ সেট, ছেদ সেট, পূরক সেট), ভেনচিত্র এবং ফাংশন (Function) সম্পর্কে জানবে। সেট ও ফাংশনের ধারণা গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
    • প্রস্তুতি কৌশল: সেটের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ এবং সেটের অপারেশনের সূত্রগুলো ভালোভাবে বুঝবে। ফাংশনের ডোমেইন ও রেঞ্জ নির্ণয় অনুশীলন করবে। উদাহরণ ও সমস্যাগুলো বারবার চর্চা করবে।
  • অধ্যায়-৩: বীজগণিতিক রাশি: এই অধ্যায়ে তোমরা বীজগণিতিক সূত্রাবলী, উৎপাদকে বিশ্লেষণ, গসাগু, লসাগু এবং বাস্তব সমস্যা সমাধানে বীজগণিতিক রাশির ব্যবহার সম্পর্কে জানবে। বিশেষ করে, বিভিন্ন সূত্রের সঠিক প্রয়োগ এবং উৎপাদকে বিশ্লেষণের কৌশল আয়ত্ত করা জরুরি।
    • প্রস্তুতি কৌশল: বীজগণিতিক সূত্রগুলো মুখস্থ করে সেগুলোর প্রয়োগ অনুশীলন করবে। উৎপাদকে বিশ্লেষণের বিভিন্ন পদ্ধতি (যেমন: মধ্যপদ বিশ্লেষণ, a3pmb3 সূত্র) এবং গসাগু-লসাগু এর সমস্যাগুলো বেশি বেশি সমাধান করবে।
  • অধ্যায়-১১: বীজগণিতিক অনুপাত ও সমানুপাত: এই অধ্যায়ে তোমরা অনুপাত ও সমানুপাতের ধারণা, বিভিন্ন প্রকার অনুপাত (যেমন: মিশ্র অনুপাত, ব্যস্ত অনুপাত), ধারাবাহিক অনুপাত এবং সমানুপাত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে কাজ করবে। বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে অনুপাত ও সমানুপাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
    • প্রস্তুতি কৌশল: অনুপাত ও সমানুপাতের মৌলিক ধারণা পরিষ্কার রাখবে। ঐকিক নিয়ম এবং সমানুপাতের সমস্যা সমাধানের কৌশলগুলো ভালোভাবে শিখবে।

খ) জ্যামিতি অংশ: আকার ও স্থানের বিজ্ঞান

জ্যামিতি গণিতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা যা আকার, আয়তন, এবং স্থানের সম্পর্ক নিয়ে কাজ করে।

  • অধ্যায়-৭: ব্যবহারিক জ্যামিতি: এই অধ্যায়ে তোমরা রুলার ও কম্পাস ব্যবহার করে বিভিন্ন জ্যামিতিক চিত্র অঙ্কন করা শিখবে। যেমন: ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত এবং এদের স্পর্শক অঙ্কন। সম্পাদ্যগুলো এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
    • প্রস্তুতি কৌশল: প্রতিটি সম্পাদ্য ধাপে ধাপে অনুশীলন করবে। অঙ্কনের প্রতিটি ধাপ ও যুক্তি বুঝে অঙ্কন করবে, শুধু মুখস্থ করবে না।
  • অধ্যায়-৮: বৃত্ত: এই অধ্যায়ে তোমরা বৃত্ত সম্পর্কিত উপপাদ্যগুলো (যেমন: বৃত্তের একই চাপের উপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বৃত্তস্থ কোণের দ্বিগুণ, অর্ধবৃত্তস্থ কোণ সমকোণ), বৃত্তের স্পর্শক এবং বৃত্তস্থ চতুর্ভুজ নিয়ে আলোচনা করবে। বৃত্তের উপপাদ্যগুলো প্রায়শই পরীক্ষায় আসে।
    • প্রস্তুতি কৌশল: বৃত্তের প্রতিটি উপপাদ্য প্রমাণসহ ভালোভাবে শিখবে। উপপাদ্যের প্রয়োগগুলো অনুশীলনের মাধ্যমে আয়ত্ত করবে। চিত্র অঙ্কন করে প্রমাণ করা অভ্যাস করবে।

গ) ত্রিকোণমিতি ও পরিমিতি: পরিমাপ ও সম্পর্কের জ্ঞান

এই দুটি অংশ গণিতকে বাস্তব জীবনের সাথে সংযুক্ত করে, যেখানে পরিমাপ এবং বিভিন্ন আকারের সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা হয়।

  • অধ্যায়-৯: ত্রিকোণমিতি: এই অধ্যায়ে তোমরা ত্রিকোণমিতিক অনুপাত (sin, cos, tan, cot, sec, cosec), ত্রিকোণমিতিক অভেদাবলী এবং উচ্চতা ও দূরত্ব সম্পর্কিত সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করবে। ত্রিকোণমিতি আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রে অপরিহার্য।
    • প্রস্তুতি কৌশল: ত্রিকোণমিতিক সূত্রগুলো মুখস্থ করবে এবং সেগুলোর প্রয়োগ অনুশীলন করবে। উচ্চতা ও দূরত্ব সম্পর্কিত সমস্যাগুলো চিত্র এঁকে সমাধান করার চেষ্টা করবে।
  • অধ্যায়-১৬: পরিমিতি: এই অধ্যায়ে তোমরা ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত, ঘনবস্তু (যেমন: ঘনক, আয়তাকার ঘনবস্তু, বেলন) ইত্যাদি জ্যামিতিক আকারের ক্ষেত্রফল, আয়তন এবং পৃষ্ঠতলের ক্ষেত্রফল নির্ণয় শিখবে। এই অধ্যায়ের সূত্রগুলো ব্যবহারিক জীবনেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
    • প্রস্তুতি কৌশল: পরিমিতির সকল সূত্র মুখস্থ করবে এবং সেগুলো প্রয়োগ করে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধান করবে। চিত্র অঙ্কন করে এবং একক (unit) এর দিকে খেয়াল রেখে সমস্যা সমাধান করবে।

ঘ) পরিসংখ্যান: তথ্য বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন

  • অধ্যায়-১৭: পরিসংখ্যান: এই অধ্যায়ে তোমরা উপাত্ত সংগ্রহ, উপাত্তের বিন্যাস (যেমন: অবিন্যস্ত ও বিন্যস্ত উপাত্ত), কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ (যেমন: গড়, মধ্যক, প্রচুরক), এবং লেখচিত্র (যেমন: আয়তলেখ, বহুভুজ, অজিভ রেখা) অঙ্কন ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে জানবে। পরিসংখ্যান বাস্তব জীবনের তথ্য বিশ্লেষণে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
    • প্রস্তুতি কৌশল: গড়, মধ্যক, প্রচুরক নির্ণয়ের সূত্রগুলো আয়ত্ত করবে। আয়তলেখ, বহুভুজ এবং অজিভ রেখা অঙ্কন ও বিশ্লেষণ অনুশীলন করবে। সারণি তৈরি করে সমস্যা সমাধানের অভ্যাস করবে।

পরিশেষে কিছু কথা:

২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য গণিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেখানে নিয়মিত অনুশীলন এবং বিষয়বস্তুর গভীর জ্ঞান থাকলে ভালো নম্বর তোলা সহজ। প্রতিটি অধ্যায় ভালোভাবে বুঝে পড়ো, সূত্রগুলো মুখস্থ করো এবং সেগুলোর প্রয়োগ অনুশীলন করো। উদাহরণ ও অনুশীলনীতে থাকা প্রতিটি সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করো।

গণিতে ভালো করার জন্য কয়েকটি সাধারণ কৌশল নিচে দেওয়া হলো:

  1. প্রতিদিন অনুশীলন: গণিত মুখস্থ করার বিষয় নয়, এটি অনুশীলনের বিষয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ২-৩ ঘণ্টা গণিত অনুশীলন করবে।
  2. সূত্র মুখস্থ: প্রতিটি অধ্যায়ের সূত্রগুলো একটি আলাদা খাতায় লিখে রাখবে এবং নিয়মিত সেগুলো মুখস্থ করবে।
  3. উদাহরণ ও সমস্যা সমাধান: বইয়ের উদাহরণগুলো মনোযোগ দিয়ে দেখবে এবং অনুশীলনীতে থাকা প্রতিটি সমস্যা নিজে নিজে সমাধান করার চেষ্টা করবে।
  4. দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ: যে অধ্যায়গুলো তোমার কঠিন লাগে, সেগুলোর উপর বেশি সময় দাও। শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে তোমার দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করো।
  5. বিগত বছরের প্রশ্নপত্র: বিগত বছরের এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান করলে প্রশ্নের ধরন এবং গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সম্পর্কে ধারণা পাবে।
  6. মডেল টেস্ট: পরীক্ষার আগে বেশি বেশি মডেল টেস্ট দাও। এতে সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বাড়বে এবং পরীক্ষার ভীতি দূর হবে।

গণিত ভয়ের বিষয় নয়, এটি আনন্দের বিষয়। নিয়মিত এবং কৌশলগত অনুশীলন তোমাকে অবশ্যই তোমার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে সাহায্য করবে।

তোমার প্রস্তুতির জন্য অনেক শুভকামনা!

এসএসসি ২০২৬ গণিত সিলেবাস – RS Academy BD