এসএসসি ২০২৬ বাংলা দ্বিতীয় পত্র সিলেবাস

এসএসসি ২০২৬ বাংলা ২য় পত্র সিলেবাস: ব্যাকরণ ও নির্মিতির খুঁটিনাটি

এসএসসি পরীক্ষা প্রতিটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ২০২৬ সালের পরীক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB) কর্তৃক প্রকাশিত পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচি অনুসারে প্রস্তুতি নেওয়া আবশ্যক। বাংলা দ্বিতীয় পত্র, যা মূলত ভাষার নিয়মকানুন এবং প্রয়োগের উপর ভিত্তি করে গঠিত, তাতে ভালো নম্বর তোলা শিক্ষার্থীদের সার্বিক ফলাফলের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই ব্লগে আমরা পরীক্ষার্থীদের এসএসসি ২০২৬ বাংলা দ্বিতীয় সিলেবাস (বিষয় কোড: ১০২, পূর্ণ নম্বর: ১০০) বিস্তারিত সিলেবাস এবং প্রতিটি অংশের প্রস্তুতির কৌশল নিয়ে আলোচনা করব, যা তোমাদের পরীক্ষায় সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।


ক) ব্যাকরণ অংশ: ভাষার মূল ভিত্তি- এসএসসি ২০২৬ বাংলা দ্বিতীয় সিলেবাস

বাংলা দ্বিতীয় পত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ব্যাকরণ। ব্যাকরণ ভাষার শৃঙ্খলা ও সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করে। এই অংশে ভালো দখল থাকলে নির্ভুলভাবে বাংলা লেখা ও বলা সম্ভব হয়।

  • ধ্বনিতত্ত্ব (ধ্বনি, বর্ণ, অক্ষর, সন্ধি): এই অংশে বাংলা ভাষার মৌলিক উপাদান ধ্বনি ও বর্ণ সম্পর্কে জানতে হবে। ধ্বনির উচ্চারণ স্থান, ধ্বনি পরিবর্তন, স্বর ও ব্যঞ্জন ধ্বনির প্রকারভেদ এবং অক্ষরের ধারণা এখানে অন্তর্ভুক্ত। বিশেষভাবে, সন্ধি (স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি, বিসর্গ সন্ধি) একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যেখানে দুটি ধ্বনির মিলন ও তার ফলে সৃষ্ট পরিবর্তন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। সন্ধির নিয়মাবলী এবং উদাহরণ ভালোভাবে আয়ত্ত করা জরুরি।
  • শব্দতত্ত্ব (শব্দের শ্রেণিবিভাগ, লিঙ্গ, বচন, পদাশ্রিত নির্দেশক): এখানে শব্দের গঠন, উৎপত্তি (যেমন: তৎসম, তদ্ভব, অর্ধ-তৎসম, দেশি, বিদেশি), এবং অর্থগত (যেমন: যৌগিক, রূঢ়ি, যোগরূঢ়) শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে পড়ানো হবে। লিঙ্গ (পুংলিঙ্গ, স্ত্রীলিঙ্গ, উভয়লিঙ্গ, ক্লীবলিঙ্গ) পরিবর্তন, বচন (একবচন, বহুবচন) এবং পদাশ্রিত নির্দেশক (যেমন: টা, টি, খানা, খানি) এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
  • পদপ্রকরণ (বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, অব্যয়, ক্রিয়া): এটি বাংলা ব্যাকরণের একটি মৌলিক অংশ, যেখানে বাক্যের প্রতিটি পদের বিস্তারিত আলোচনা থাকে। বিশেষ্য (নামবাচক, জাতিবাচক, সমষ্টিবাচক ইত্যাদি), বিশেষণ (নাম বিশেষণ, ভাব বিশেষণ), সর্বনাম (ব্যক্তিবাচক, আত্মবাচক, নির্দেশক ইত্যাদি), অব্যয় (সমুচ্চয়ী, অনন্বয়ী, অনুসর্গ) এবং ক্রিয়া (সকর্মক, অকর্মক, সমাপিকা, অসমাপিকা) পদের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও বাক্যে তাদের প্রয়োগ সম্পর্কে জানতে হবে।
  • বাক্যতত্ত্ব (বাক্যের অংশ, শ্রেণিবিভাগ, বাক্য রূপান্তর, বাচ্য পরিবর্তন, উক্তি পরিবর্তন): এই অংশে একটি সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ট্য, বাক্যের গঠনগত অংশ (উদ্দেশ্য ও বিধেয়), এবং অর্থগত ও গঠনগত শ্রেণিবিভাগ (সরল, জটিল, যৌগিক) সম্পর্কে পড়ানো হয়। বাক্য রূপান্তর (যেমন: সরল থেকে জটিল, অস্তিবাচক থেকে নেতিবাচক) এবং বাচ্য পরিবর্তন (কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য, ভাববাচ্য) ও উক্তি পরিবর্তন (প্রত্যক্ষ থেকে পরোক্ষ) একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা অনুশীলনের মাধ্যমে আয়ত্ত করতে হবে।
  • বিরামচিহ্ন: বাংলা লেখায় সঠিক অর্থ প্রকাশের জন্য বিরামচিহ্নের ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। এই অংশে বিভিন্ন প্রকার বিরামচিহ্ন (যেমন: দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন, কোলন, ড্যাশ, হাইফেন, উদ্ধৃতি চিহ্ন, প্রশ্নবোধক চিহ্ন, বিস্ময়সূচক চিহ্ন) এবং তাদের প্রয়োগবিধি সম্পর্কে জানতে হবে।
  • বানান ও এর নিয়ম: বাংলা বানানের শুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য এর নিয়মাবলী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক। এই অংশে বাংলা একাডেমির প্রণীত প্রমিত বানান রীতি এবং বানানের বিভিন্ন নিয়ম (যেমন: ই-কার/ঈ-কার, ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধান) সম্পর্কে পড়ানো হবে।
  • প্রয়োগ অপপ্রয়োগ: বাংলা ভাষায় শব্দ ও বাক্যের ভুল প্রয়োগ এবং তার শুদ্ধ রূপ নিয়ে এই অংশ আলোচনা করে। এটি ভাষার ভুল ব্যবহার এড়িয়ে সঠিক ও মার্জিত ভাষা প্রয়োগে সাহায্য করে।
  • সমাস: সমাসের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ (যেমন: দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, অব্যয়ীভাব, দ্বিগু) এবং ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রায়োগিক বিষয়। সমাসের প্রতিটি নিয়ম উদাহরণসহ বারবার অনুশীলন করতে হবে।
  • কারক ও বিভক্তি: বাংলা ব্যাকরণের এই অংশে বাক্যের অন্তর্গত নাম পদের সঙ্গে ক্রিয়াপদের সম্পর্ক এবং সেই সম্পর্ক বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত বিভক্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়। কারকের প্রকারভেদ (কর্তা, কর্ম, করণ, সম্প্রদান, অপাদান, অধিকরণ) এবং বিভিন্ন বিভক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হবে।

প্রস্তুতি কৌশল (ব্যাকরণ): ব্যাকরণের প্রতিটি নিয়ম উদাহরণসহ মুখস্থ করার পাশাপাশি বুঝে বুঝে অনুশীলন করা জরুরি। বাজারের ভালো মানের গাইড বই থেকে বিভিন্ন ধরনের নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্ন ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন সমাধান করবে। নিয়মিত অনুশীলন এবং ভুলগুলো চিহ্নিত করে সংশোধন করলে এই অংশে ভালো নম্বর পাওয়া সহজ হবে।


খ) নির্মিত অংশ: সৃজনশীলতা ও প্রকাশভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ

নির্মিত অংশটি শিক্ষার্থীদের ভাষা প্রয়োগের দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং কোনো বিষয়কে সুসংগঠিতভাবে উপস্থাপন করার ক্ষমতাকে মূল্যায়ন করে।

  • ভাবসম্প্রসারণ: কোনো ছোট উক্তি বা বাক্যের অন্তর্নিহিত গভীর অর্থকে বিস্তারিতভাবে, যুক্তি ও উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করাকে ভাবসম্প্রসারণ বলে। এটি শিক্ষার্থীর বিশ্লেষণ ক্ষমতা, চিন্তার গভীরতা এবং ভাষার সৌন্দর্য প্রকাশের দক্ষতা যাচাই করে। বিভিন্ন দার্শনিক উক্তি, প্রবাদ বাক্য বা কবিতার চরণ নিয়ে অনুশীলন করলে ভালো করা সম্ভব।
  • সারাংশ/সারমর্ম: একটি বড় গদ্য অনুচ্ছেদ বা কবিতার মূল বক্তব্যকে সংক্ষেপে, স্পষ্ট ও নিজের ভাষায় প্রকাশ করাই হলো সারাংশ বা সারমর্ম। সারাংশের ক্ষেত্রে গদ্যের মূলভাব, আর সারমর্মের ক্ষেত্রে কবিতার মূলভাব তুলে ধরতে হয়। এখানে অপ্রয়োজনীয় তথ্য বাদ দিয়ে শুধু মূল কথাটি লিখতে হয়। নিয়মিত অনুশীলন করলে এই অংশে ভালো নম্বর তোলা যায়।
  • পত্র লিখন/দরখাস্ত লিখন: এই অংশে দুই ধরনের পত্র লেখার অনুশীলন করতে হবে:
    • ব্যক্তিগত পত্র: আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের কাছে লেখা অনানুষ্ঠানিক চিঠি। এতে ভাষা সহজ ও আন্তরিক হয়।
    • দরখাস্ত/আবেদনপত্র: কোনো প্রতিষ্ঠান, কর্তৃপক্ষ বা কর্মকর্তার কাছে আনুষ্ঠানিক প্রয়োজনে লেখা পত্র। এগুলোর একটি নির্দিষ্ট কাঠামো, মার্জিত ভাষা এবং প্রয়োজনীয় তথ্য থাকে। যেমন: ছুটির আবেদন, প্রশংসাপত্রের আবেদন, চাকরির আবেদন ইত্যাদি।
  • প্রতিবেদন লিখন: কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা, সমস্যা, সভা বা বিষয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট কাঠামো ও নিয়ম মেনে প্রতিবেদন তৈরি করা। প্রতিবেদন সাধারণত তথ্যনির্ভর, নিরপেক্ষ এবং সুনির্দিষ্ট হয়। এটি স্কুলের কোনো অনুষ্ঠান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে হতে পারে। প্রতিবেদনের শিরোনাম, উৎস, তারিখ, লেখকের নাম এবং মূল বিষয়বস্তুর সুবিন্যস্ত উপস্থাপন জরুরি।
  • প্রবন্ধ রচনা: একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ও সুসংগঠিতভাবে আলোচনা করাই হলো প্রবন্ধ রচনা। প্রবন্ধে একটি সুনির্দিষ্ট ভূমিকা, বিষয়বস্তুর বিস্তারিত বিশ্লেষণ (একাধিক অনুচ্ছেদে) এবং একটি উপসংহার থাকে। এতে শিক্ষার্থীর বিষয় জ্ঞান, চিন্তার গভীরতা, ভাষার সাবলীলতা এবং যুক্তি উপস্থাপনের ক্ষমতা যাচাই করা হয়। বিজ্ঞান, পরিবেশ, সামাজিক সমস্যা, ইতিহাস বা দৈনন্দিন জীবনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রবন্ধের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। শব্দসীমা এবং সময়সীমার দিকে খেয়াল রেখে অনুশীলন করা উচিত।

প্রস্তুতি কৌশল (নির্মিত): নির্মিত অংশে ভালো করার জন্য নিয়মিত লেখার অনুশীলন অপরিহার্য। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা, পত্র ও প্রতিবেদন লেখার সঠিক ফরম্যাট মুখস্থ করা এবং ভাবসম্প্রসারণ ও অনুচ্ছেদের জন্য বিষয়বস্তু সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করা উচিত। বিভিন্ন মডেল টেস্টে অংশ নিয়ে সময় ব্যবস্থাপনার অনুশীলন করলে পরীক্ষা হলে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।


পরিশেষে কিছু কথা:

২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য বাংলা দ্বিতীয় পত্র একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেখানে ভালো নম্বর তোলার ব্যাপক সুযোগ থাকে। ব্যাকরণ অংশে পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান এবং নির্মিত অংশে সাবলীল ও পরিচ্ছন্ন লেখার দক্ষতা—এই দুইয়ের সমন্বয়ই তোমাকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যেতে পারে। পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায় মনোযোগ সহকারে পড়ে, নিয়মিত অনুশীলন করে এবং সময় ব্যবস্থাপনার উপর জোর দিয়ে প্রস্তুতি নিলে তুমি অবশ্যই তোমার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারবে।

তোমার প্রস্তুতির জন্য অনেক শুভকামনা!


এসএসসি ২০২৬ বাংলা ২য় পত্র সিলেবাস – RS Academy BD