এসএসসি পরীক্ষা প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (NCTB) কর্তৃক প্রকাশিত পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলা প্রথম পত্র, যা আমাদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি, তাতে ভালো নম্বর তোলা অত্যন্ত জরুরি। এই ব্লগে আমরা এসএসসি ২০২৬ বাংলা প্রথম পত্র সিলেবাস (বিষয় কোড: ১০১, পূর্ণ নম্বর: ১০০) বিস্তারিত সিলেবাস এবং প্রতিটি অংশের প্রস্তুতির কৌশল নিয়ে আলোচনা করব, যা তোমাদের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনে সহায়ক হবে।
ক) গদ্য: সাহিত্যের আয়নায় সমাজের প্রতিচ্ছবি
বাংলা প্রথম পত্রের গদ্য অংশটি গল্প ও প্রবন্ধের সমন্বয়ে গঠিত। এই অংশটি শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- শুভা (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর): এই মর্মস্পর্শী ছোটগল্পটি বাকপ্রতিবন্ধী এক কিশোরী শুভার জীবন, তার একাকীত্ব এবং প্রকৃতি ও প্রাণিজগতের সঙ্গে তার গভীর আত্মিক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। সমাজের তথাকথিত স্বাভাবিকতার বাইরে গিয়ে শুভার নীরব পৃথিবী এবং তার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি এখানে ফুটে উঠেছে। এটি শিক্ষার্থীদের সংবেদনশীলতা ও সহমর্মিতা শেখায়। গল্পটির মূল বার্তা, চরিত্রগুলোর বৈশিষ্ট্য এবং লেখকের লেখার ধরন অনুধাবন করা জরুরি।
- বইপড়া (প্রমথ চৌধুরী): এই প্রবন্ধে প্রমথ চৌধুরী বই পড়ার আনন্দ, এর প্রয়োজনীয়তা এবং জ্ঞান অর্জনে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। এটি প্রচলিত মুখস্থনির্ভর শিক্ষার বিপরীতে প্রকৃত জ্ঞানার্জনের পথ দেখায়। প্রবন্ধটির মূলভাব, লেখকের যুক্তিতর্ক এবং গুরুত্বপূর্ণ উক্তিগুলো মনে রাখতে হবে।
- আহ্বান (বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়): বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই গল্পটি গ্রামবাংলার সহজ-সরল জীবনযাপন, গ্রামীণ মানুষের আতিথেয়তা এবং তাদের সঙ্গে শহরের মানুষের আত্মিক বন্ধনের এক অসাধারণ চিত্র। গল্পটি আত্মিক সম্পর্ক ও মানবিক মূল্যবোধের গুরুত্ব তুলে ধরে। চরিত্রগুলো, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং গল্পের গ্রামীণ পরিবেশের বর্ণনা ভালোভাবে পড়তে হবে।
- পল্লি-সাহিত্য (ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ): এই প্রবন্ধে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ লোকসাহিত্য বা পল্লি-সাহিত্যের গুরুত্ব, এর বিভিন্ন শাখা (যেমন – রূপকথা, লোকগল্প, ছড়া, প্রবাদ) এবং এর হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। গ্রামীণ সংস্কৃতি ও তার মৌখিক ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা এই প্রবন্ধের মূল সুর। বিভিন্ন লোকসাহিত্যিক উপাদান এবং সেগুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো।
- দেনাপাওনা (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর): রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গল্পটি তৎকালীন সমাজের যৌতুক প্রথার নির্মমতা এবং এর শিকার নারীর আত্মমর্যাদার লড়াইকে কেন্দ্র করে রচিত। এটি সমাজের কুপ্রথা ও তার ফলস্বরূপ নারীর অসহায়ত্বের চিত্র তুলে ধরে। গল্পের চরিত্রগুলোর পরিণতি এবং সমাজের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে।
- শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব (মোতাহের হোসেন চৌধুরী): এই প্রবন্ধে লেখক শিক্ষা ও মনুষ্যত্বের দুটি দিক—প্রয়োজনভিত্তিক শিক্ষা (যা অন্নবস্ত্রের চিন্তা মেটায়) এবং মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষা (যা মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে)—তুলে ধরেছেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন যে, প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ অর্জনই প্রকৃত শিক্ষার উদ্দেশ্য। প্রবন্ধের মূল যুক্তি এবং লেখকের দর্শনের উপর জোর দিতে হবে।
- আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে (কাজী নজরুল ইসলাম): কাজী নজরুল ইসলামের এই গান-কবিতাটি সৃষ্টি, নবজীবন এবং সৃষ্টিকর্তার মহিমা ও অপার আনন্দকে প্রকাশ করে। এটি সৃষ্টির উল্লাস এবং অদম্য প্রাণশক্তির এক অপূর্ব কাব্যিক রূপায়ণ। কবিতার অন্তর্নিহিত অর্থ, কবির আনন্দময় মনোভাব এবং ব্যবহৃত রূপকগুলো বুঝতে চেষ্টা করবে।
- সিরাজউদ্দৌলা (গদ্যরূপ): এই অংশে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের একটি অংশ বা সারসংক্ষেপ গদ্যাকারে দেওয়া হতে পারে। এটি নবাব সিরাজউদ্দৌলার জীবন, পলাশীর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির উত্থানের ঐতিহাসিক চিত্র তুলে ধরে। চরিত্রগুলো, তাদের ভূমিকা এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা জরুরি।
প্রস্তুতি কৌশল (গদ্য): প্রতিটি গদ্যের মূলভাব, লেখক পরিচিতি, উল্লেখযোগ্য চরিত্র ও তাদের বৈশিষ্ট্য, এবং ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ শব্দার্থ ভালোভাবে পড়তে হবে। গল্প ও প্রবন্ধের ভেতরের প্রশ্নগুলো (যেমন – অনুধাবন ও প্রয়োগমূলক প্রশ্ন) অনুশীলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
খ) কবিতা: অনুভূতির বর্ণিল প্রকাশ
কবিতা অংশটি বাংলা সাহিত্যের গভীরতা এবং ভাষার সৌন্দর্য তুলে ধরে। এটি শিক্ষার্থীদের কল্পনাশক্তি ও নান্দনিক বোধকে উন্নত করে।
- কপোতাক্ষ নদ (মাইকেল মধুসূদন দত্ত): এটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের দেশপ্রেম ও স্মৃতিকাতরতার এক অমর সৃষ্টি। চতুর্দশপদী এই কবিতায় কবি কপোতাক্ষ নদের প্রতি নিজের গভীর ভালোবাসা এবং প্রবাসে থেকেও মাতৃভূমিকে ভুলতে না পারার বেদনা প্রকাশ করেছেন। কবিতার ছন্দ, অলঙ্কার এবং দেশপ্রেমের মূল সুর অনুধাবন করা জরুরি।
- বঙ্গবাণী (আব্দুল হাকিম): এই কবিতায় আব্দুল হাকিম বাংলা ভাষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যারা নিজের মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করে, তারা আসলে আত্মপরিচয়হীন। বাংলা ভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা এই কবিতার মূল বিষয়।
- জীবন-সঙ্গীত (হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়): এই অনুপ্রেরণামূলক কবিতায় হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনকে একটি কর্মক্ষেত্র হিসেবে দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও হতাশ না হয়ে সৎ ও নির্ভীকভাবে কর্ম করে যেতে হবে। এটি জীবন সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দেয়।
- মানুষ (কাজী নজরুল ইসলাম): এই মানবতাবাদী কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সমতা ও ভাতৃত্বের কথা বলেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, মানবতাই সবচেয়ে বড় ধর্ম এবং মানুষ হিসেবে সবার অধিকার সমান। কবিতার মূলনীতি, সাম্যবাদ এবং ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে কবির দৃঢ় অবস্থান বুঝতে হবে।
- সেইদিন এই মাঠ (জীবনানন্দ দাশ): জীবনানন্দ দাশের এই কবিতায় প্রকৃতির চিরন্তনতা এবং মানুষের জীবন ও সৃষ্টির ক্ষণস্থায়ীত্বের কথা বলা হয়েছে। মানুষ মরণশীল হলেও প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে অবিচল থাকে। প্রকৃতির সৌন্দর্য, তার চক্রাকার রূপ এবং জীবনের ক্ষণস্থায়ীত্ব সম্পর্কে কবির দৃষ্টিভঙ্গি অনুধাবন করা জরুরি।
- পল্লি জননী (জসীমউদ্দীন): জসীমউদ্দীনের এই কবিতায় গ্রামবাংলার এক মায়ের তার অসুস্থ সন্তানের প্রতি গভীর মমত্ববোধ, স্নেহ এবং তাদের দুঃখ-কষ্টের এক করুণ চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এটি গ্রামীণ জীবনের বাস্তবতা ও মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার প্রতীক।
- আমার পরিচয় (সৈয়দ শামসুল হক): এই কবিতায় সৈয়দ শামসুল হক বাঙালি জাতির দীর্ঘ ইতিহাস, সংগ্রাম, ঐতিহ্য এবং আত্মপরিচয়ের গৌরবময় দিকগুলো তুলে ধরেছেন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালির ধারাবাহিক অর্জন এখানে উঠে এসেছে। বাঙালির আত্মপরিচয়, তার শেকড় এবং ঐতিহাসিক উপাদানগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়া উচিত।
- তোমাকে পাওয়ার জন্য, হে স্বাধীনতা (শামসুর রাহমান): শামসুর রাহমানের এই কবিতায় স্বাধীনতার জন্য বাঙালির দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, ত্যাগ এবং আকুল আকাঙ্ক্ষার কথা বলা হয়েছে। স্বাধীনতা এখানে শুধু একটি শব্দ নয়, এটি কোটি মানুষের স্বপ্ন, আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এক গৌরবময় অর্জন। কবিতার মূলভাব, ব্যবহৃত চিত্রকল্প এবং স্বাধীনতার প্রতি বাঙালির আবেগ অনুধাবন করা গুরুত্বপূর্ণ।
- স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো (নির্মলেন্দু গুণ): নির্মলেন্দু গুণের এই দীর্ঘ কবিতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং তার মাধ্যমে কীভাবে বাঙালির মনে স্বাধীনতার স্বপ্ন প্রোথিত হয়েছিল, তার এক কাব্যিক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এটি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি এবং স্বাধীনতার ঘোষণায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা বুঝতে সাহায্য করবে।
প্রস্তুতি কৌশল (কবিতা): প্রতিটি কবিতার মূলভাব, কবির পরিচিতি, ব্যবহৃত চিত্রকল্প, উপমা, রূপক এবং কবিতার অন্তর্নিহিত বার্তাগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। কবিতার প্রতিটি চরণ বুঝে পড়া এবং এর বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা বাড়াতে হবে।
গ) উপন্যাস: ‘কাকতাড়ুয়া’ – মুক্তিযুদ্ধের এক অমর উপাখ্যান
- কাকতাড়ুয়া (সেলিনা হোসেন): এই উপন্যাসটি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘বুধা’ নামক এক কিশোরের চোখে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা, দেশপ্রেম এবং তার আত্মত্যাগের অনন্যসাধারণ কাহিনি বর্ণনা করা হয়েছে। বুধা কীভাবে ছোট ছোট প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং একসময় নিজের জীবন উৎসর্গ করে, তা অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শীভাবে তুলে ধরা হয়েছে। উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মানুষের আত্মদান এবং শিশুদের উপর যুদ্ধের প্রভাব বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রস্তুতি কৌশল (উপন্যাস): উপন্যাসের প্রধান চরিত্র, অপ্রধান চরিত্র, গল্পের পটভূমি, মূল ঘটনাপ্রবাহ, সংঘাত এবং উপন্যাসের কেন্দ্রীয় বার্তা—এগুলো ভালোভাবে বুঝে পড়তে হবে। চরিত্রগুলোর বিশ্লেষণ এবং তাদের সংলাপের তাৎপর্য অনুধাবন করা জরুরি।
ঘ) নাটক: ‘সিরাজউদ্দৌলা’ – স্বাধীনতার শেষ সূর্য
- সিরাজউদ্দৌলা (সিকান্দার আবু জাফর): এই ঐতিহাসিক নাটকটি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার ক্ষমতায় আরোহণ, তার পতন এবং পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার এক ট্র্যাজিক কাহিনী বর্ণনা করে। নাটকটি বিশ্বাসঘাতকতা, চক্রান্ত, দেশপ্রেম এবং ক্ষমতা দখলের জটিল চিত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। মিরজাফর, ঘষেটি বেগম, লর্ড ক্লাইভ প্রমুখ চরিত্রগুলোর ভূমিকা এবং তাদের সংলাপের তাৎপর্য গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে। এটি শুধু একটি নাটক নয়, এটি বাঙালির ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
প্রস্তুতি কৌশল (নাটক): নাটকের প্রতিটি অঙ্ক ও দৃশ্য ভালোভাবে পড়তে হবে। প্রধান চরিত্রগুলো, তাদের বৈশিষ্ট্য, সংলাপ, এবং নাটকের মূল সংঘাত ও পরিণতি নিয়ে বিস্তারিত ধারণা রাখতে হবে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বোঝা নাটকটি বিশ্লেষণের জন্য সহায়ক হবে।
ঙ) ব্যাকরণ অংশ: বাংলা ভাষার ভিত্তি
ব্যাকরণ অংশটি বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহার ও কাঠামো বোঝার জন্য অপরিহার্য। এই অংশে ভালো করার অর্থ হলো ভাষার উপর দক্ষতা অর্জন করা।
- বাংলা ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ: বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক পটভূমি, এর উৎপত্তি এবং সময়ের সাথে সাথে এর বিবর্তন সম্পর্কে মৌলিক ধারণা।
- শব্দ: শব্দের সংজ্ঞা, শ্রেণিবিভাগ (যেমন – উৎসগত, গঠনগত, অর্থগত), এবং বিভিন্ন ধরনের শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে জ্ঞান।
- পদ: পদের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ (বিশেষ্য, বিশেষণ, সর্বনাম, ক্রিয়া, অব্যয়) এবং বাক্যে তাদের সঠিক প্রয়োগ ও পারস্পরিক সম্পর্ক।
- বাক্য: বাক্যের সংজ্ঞা, সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ (যেমন – গঠনগত: সরল, জটিল, যৌগিক; অর্থগত: বিবৃতি, প্রশ্ন, আদেশ, বিস্ময়) এবং বাক্য রূপান্তরের নিয়মাবলী।
- সন্ধি: সন্ধির সংজ্ঞা, প্রকারভেদ (স্বরসন্ধি, ব্যঞ্জনসন্ধি, বিসর্গ সন্ধি), সন্ধি বিচ্ছেদের নিয়মাবলী এবং এর সঠিক প্রয়োগ।
- সমাস: সমাসের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ (যেমন – দ্বন্দ্ব, কর্মধারয়, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, অব্যয়ীভাব, দ্বিগু) এবং ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয় ও এর প্রয়োগ।
- প্রত্যয়: প্রত্যয়ের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ (কৃৎ প্রত্যয়, তদ্ধিত প্রত্যয়) এবং কীভাবে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তা বোঝা।
- উপসর্গ: বাংলা ও বিদেশি উপসর্গের সংজ্ঞা, শ্রেণিবিভাগ এবং নতুন শব্দ গঠনে তাদের ভূমিকা ও প্রভাব।
- ধ্বনিতত্ত্ব: ধ্বনি, বর্ণ, অক্ষর, ধ্বনির উচ্চারণ স্থান ও প্রকৃতি, ধ্বনি পরিবর্তন এবং বাংলা ভাষার ধ্বনি ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা।
- শব্দতত্ত্ব: শব্দের গঠন, প্রকারভেদ, পদ পরিবর্তন এবং বাংলা শব্দভাণ্ডার সম্পর্কে জ্ঞান।
- পদপ্রকরণ: পদের বিস্তারিত আলোচনা, যেমন – বিশেষ্যের শ্রেণিবিভাগ, সর্বনামের প্রকারভেদ ইত্যাদি।
- বাক্যতত্ত্ব: সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ট্য, বাক্য গঠনের নিয়ম, বাক্যের অংশ (উদ্দেশ্য ও বিধেয়) এবং বাক্য রূপান্তর।
- বাচ্য: বাচ্যের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ (কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য, ভাববাচ্য) এবং বাচ্য পরিবর্তনের নিয়মাবলী।
- উক্তি: উক্তির সংজ্ঞা, প্রকারভেদ (প্রত্যক্ষ উক্তি, পরোক্ষ উক্তি) এবং উক্তি পরিবর্তনের নিয়ম ও কৌশল।
- বিরামচিহ্ন: বাংলা লেখায় বিভিন্ন বিরামচিহ্নের (দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন, উদ্ধৃতি চিহ্ন, প্রশ্নবোধক চিহ্ন, বিস্ময়সূচক চিহ্ন ইত্যাদি) সঠিক ব্যবহার এবং তাদের প্রয়োগের স্থান।
প্রস্তুতি কৌশল (ব্যাকরণ): প্রতিটি ব্যাকরণিক নিয়ম উদাহরণসহ ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। অনুশীলন বই থেকে প্রচুর পরিমাণে অনুশীলন করা এবং নিয়মিত নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্ন সমাধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চ) নির্মিত অংশ: সৃজনশীলতা ও প্রকাশভঙ্গির পরীক্ষা
নির্মিত অংশটি শিক্ষার্থীদের লেখার দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং কোনো বিষয়কে সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করার ক্ষমতাকে মূল্যায়ন করে।
- সারাংশ ও সারমর্ম: একটি বড় অনুচ্ছেদ বা কবিতার মূল বক্তব্যকে সংক্ষেপে, নিজের ভাষায় প্রকাশ করার দক্ষতা। এক্ষেত্রে মূলভাব বজায় রেখে অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিতে হয়। নিয়মিত অনুশীলন করলে এটিতে ভালো করা সহজ।
- ভাবসম্প্রসারণ: একটি ছোট উক্তি বা বাক্যের অন্তর্নিহিত গভীর অর্থকে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা। এটি শিক্ষার্থীর গভীর চিন্তাশক্তি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা এবং ভাষার উপর দখল প্রকাশ করে। প্রতিটি উক্তির পেছনের দার্শনিক বা নৈতিক বার্তা অনুধাবন করে লেখা জরুরি।
- প্রতিবেদন লিখন: কোনো ঘটনা, সমস্যা বা বিষয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে একটি নির্দিষ্ট কাঠামো (যেমন – তারিখ, প্রাপক, বিষয়, উৎস, মূল বক্তব্য, সুপারিশ) অনুসরণ করে রিপোর্ট তৈরি করা। এটি তথ্যভিত্তিক, নিরপেক্ষ এবং সুনির্দিষ্ট হতে হয়। স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠান, কোনো দুর্ঘটনা বা সামাজিক সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদন লেখার অনুশীলন করতে হবে।
- পত্র লিখন (ব্যক্তিগত ও দাপ্তরিক):
- ব্যক্তিগত পত্র: আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুদের কাছে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে লেখা চিঠি। এতে ভাষা অনানুষ্ঠানিক ও অন্তরঙ্গ হয়।
- দাপ্তরিক পত্র: কোনো সরকারি বা বেসরকারি দপ্তরে আনুষ্ঠানিক কাজের জন্য লেখা চিঠি (যেমন – আবেদনপত্র, অভিযোগপত্র, চাকরির আবেদন)। এগুলোর নির্দিষ্ট ফরম্যাট, তারিখ, প্রাপক ও প্রেরকের ঠিকানা এবং মার্জিত ভাষা ব্যবহার করতে হয়।
- প্রবন্ধ রচনা: একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে বিস্তারিত ও সুবিন্যস্তভাবে আলোচনা করা। এতে একটি সুস্পষ্ট ভূমিকা, বিষয়বস্তুর একাধিক অনুচ্ছেদে বিশ্লেষণ এবং একটি কার্যকর উপসংহার থাকতে হয়। বিষয়বস্তুর জ্ঞান, ভাষার দক্ষতা এবং যুক্তিপূর্ণ উপস্থাপনা প্রবন্ধ রচনার জন্য অপরিহার্য। সামাজিক সমস্যা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি বা ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে লেখার অনুশীলন করতে হবে।
- অনুচ্ছেদ লিখন: একটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে, একটিমাত্র অনুচ্ছেদে লেখা। এতে মূলভাবটি দ্রুত ও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়। এটি ছোট হলেও এতে বিষয়বস্তুর একটি পরিপূর্ণ ধারণা থাকতে হবে।
প্রস্তুতি কৌশল (নির্মিত): নির্মিত অংশে ভালো করার জন্য নিয়মিত লেখার অনুশীলন অপরিহার্য। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা, পত্র ও প্রতিবেদন লেখার ফরম্যাট মুখস্থ করা এবং ভাবসম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন উক্তির অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝার চেষ্টা করা উচিত।
পরিশেষে কিছু কথা:
২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য বাংলা প্রথম পত্র একটি চ্যালেঞ্জিং হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিয়মিত পাঠ্যবই অধ্যয়ন, ব্যাকরণ অংশের নিয়মনীতিগুলো বারবার অনুশীলন এবং নির্মিত অংশের জন্য নিয়মিত লেখার অভ্যাসের মাধ্যমে এই বিষয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব। মনে রাখবে, সিলেবাসের প্রতিটি অংশই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কোনো অংশকে অবহেলা না করে ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে তুমি অবশ্যই ভালো করবে।
তোমার প্রস্তুতির জন্য শুভকামনা!