শিক্ষা ও শিক্ষক কোনটি জাতির মেরুদন্ড?

শিক্ষা কি

শিক্ষা শিক্ষক এ বিষয়ে বলতে গেলে আমরা বুঝি ও জানি, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। তাহলে শিক্ষক হলো সেই মেরুদন্ডের কারিগর। শিক্ষকতার অধিক সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ আর কোন পেশা নেই। শিক্ষক হলো সমাজের ও জাতির মেরুদন্ড। এই দুনিয়ায় যে যতই জ্ঞান অর্জন করেছে কোন না কোন শিক্ষকতার হাত ধরেই।

শিক্ষা কি

(ক)    শঙ্কররায়ের মতে- “ আত্মজ্ঞান লাভই শিক্ষা”।

(খ)    গান্ধীজী মতে- “ ব্যক্তির দেহ, মন ও আত্মার সুষম বিকাশের প্রয়াসই শিক্ষা”।

(গ)    স্বামী বিবেকানন্দ মতে- “মানুষের অন্তর নিহীত সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশই হলো শিক্ষা”।

(ঘ)    পরিবেশ পরিস্থিতির সংগে পারস্পারিক অবস্থায় খাপ খাওয়াইয়ে চলার নাম শিক্ষা।

শিক্ষার বৈশিষ্ট্য দুই প্রকার:-

  • সংকীর্ন অর্থে
  • ব্যাপক অর্থে

সংকীর্ন আর্থ বৈশিষ্ট্য:-

  1. জ্ঞান বৃদ্ধি করা, ডিগ্রী লাভ করা।
  2. এটি একটি একমূখী প্রক্রিয়া।
  3. বিদ্যালয় কেন্দ্রীক এবং পুঁতি নির্ভর।
  4. অপরিবর্তীত গতিহীন।

ব্যাপক অর্থে বৈশিষ্ট্য:-

১. এটি জীবন ব্যাপী প্রক্রিয়া

২. ব্যাপক অর্থে শিক্ষা হলো বহুমুখী প্রক্রিয়া।

৩. এটি জীবন ব্যাপি ক্রম বিকাশ প্রক্রিয়া। এই শিক্ষা শিশুর জন্মগত সামর্থ্য, সম্ভাবনা ও স্বত:স্ফর্ত চিন্তাশক্তি ক্রমবিকাশে সাহায্য করে।

৪. এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের চাহিদা ও প্রবণতা অনুযায়ী হয়ে থাকে।

৫. এই শিক্ষা আচরনের পরিবর্তন, মূল্যবোধের বিকাশ, উদারনৈতিক মনোভাব গঠনের সহায়তা করে।

শিক্ষার উদ্দেশ্য

(ক)      সক্রেটিস এর মতে- শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মিথ্যার বিনাশ আর সত্যের আবিস্কার।

(খ)      প্লেটোর মতে- শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো, শরীর ও আত্মার পরিপূর্ণ বিকাশ ও উন্নতির জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তা সবই শিক্ষার উদ্দেশ্যের অন্তর্ভূক্ত।

(গ)      এ্যারিস্টলের মতে- শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো ধর্মীয় অনুশাসনের অনুমোদিত পবিত্র কার্যক্রমের মাধ্যমে সূখ লাভ করা।

(ঘ)     হার্বার্ট স্পেনসার এর মতে- শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে শিশুর সম্ভাবনা ও অনুরাগের পূর্ণ বিকাশ ও নৈতিক চরিত্রের প্রকাশ।

(ঙ)     জন ডিউই এর মতে- শিক্ষার উদ্দেশ্য আত্ম উপলব্ধি।

(চ)     রুশোর মতে- সু অভ্যাস গড়ে তোলাই শিক্ষার উদ্দেশ্য।

(ছ)     কিন্ডার গার্টের পদ্ধতির উদ্ভাবক ফ্রয়বেলের মতে- শিক্ষার উদ্দেশ্য হবে সুন্দর বিশ্বাস যোগ্য ও পবিত্র জীবনের উপলদ্ধি।

শিক্ষার লক্ষ্য

  1. শিক্ষার লক্ষ্য জ্ঞান অর্জন করা।
  2. মূল্যবোধ সৃষ্টি করা।
  3. নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করা।
  4. সৃষ্টি চেতনার উন্মেষ ঘটানো।
  5. চরিত্র গঠন করা।
  6. আধ্যাত্মিক চেতনাকে জাগ্রত করা।
  7. সুনাগরিক গড়ে তোলা।
  8. বৃত্তি শিক্ষা বা হাতে-কলমে শিক্ষা।
  9. সমাজের আচরণগত, রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও নতুন প্রজম্নের নিকট তুলে ধরা।
  10. প্রাকৃতিক পরিবেশের বিকাশ ঘটানো।
  11. পরিবেশের সংগে শিশুর সার্থক সংগতি বিকাশ করে চলতে শিখানো।
  12. গণতান্ত্রিক সমাজ, সাম্যবাদ, শ্রেণী বৈষম্য, জেন্ডার সহযোগীতা বোধ ও ভ্রাতৃবোধের বিকাশ ঘটানো।

শিক্ষক কাকে বলে

শিক্ষা দানের মহান ব্রত যার কাজ তাকেই শিক্ষক বলা হয়।

শিক্ষকের তাৎপর্য 

শি= ক) শিক্ষন

খ) শেখানো

গ) শাসন

ক্ষ=  ক) ক্ষমাশীল

খ) ক্ষমতাময়ী

গ) ক্ষমতাধর

ক=  ক) কৌতুহলী

খ) কৌশলী

গ) কর্মপ্রবন

শিক্ষকের গুনাবলী বা বৈশিষ্ট্যঃ

  1.   আধুনিক বিষয়ে জ্ঞানের অভিজ্ঞতা।
  2.   আদর্শিক চেতনায় সুষমান্ডিত ব্যক্তিত্ব।
  3.   ধর্মীয় দর্শনে উজ্জীবিত মোহনীয় ব্যাক্তিত্ব।
  4.   মার্জিত, পরিচ্ছন্নতা ও মার্জিত আচরণ কারী।
  5.   যথার্থ নিয়মের অনুশীলনকারী
  6.   আধুনিকশিক্ষা, ও শিক্ষা পদ্ধতির প্রয়োগ দক্ষতা ।
  7.   উপকরণ ব্যবহারের দক্ষতা।
  8.   ন্যায়নীতিবোধ ও বিচক্ষণতা।
  9.   সর্বাধুনিক তথ্য ও অভিজ্ঞতাপূর্ন ব্যক্তিত্ব।
  10.   শ্রেণী নিয়ন্ত্রন দক্ষতা ও তীক্ষ্ণ বিচক্ষণতা।
  11.   কৌতুহলী এবং সৃজনশীল চেতনা।
  12.   যথার্থ এবং উপস্থাপন দক্ষতা।
  13.   প্রগতিশীল কর্মে উদ্দীপনা।
  14.   শ্রুতিমধুর উপস্থাপন দক্ষতা।
  15.   মমত্ববোধ ও ভালবাসা।
  16.   দায়িত্ব পূর্ন সহযোগীতা।
  17.   র্নিরপেক্ষ মুল্যায়ন ক্ষমতা।
  18.   নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পন্ন।
  19.   আন্তর্জাতিক উদাহরণ ব্যবহার করা।

শিক্ষকের পেশাগত দায়িত্ব কর্তব্য

  1.  নিয়মিত ও সময়মত উপস্থিতি।
  2.  নিয়মিত শিখন শিক্ষা সম্পন্ন করা।
  3.  পাঠ পরিকল্পনা ভিত্তিক শ্রেনী শিক্ষন।
  4.  পাঠে মনোযোগ আকর্ষণ।
  5.  শিক্ষার্থীর কৌতুহল সৃষ্টি করণ।
  6.  S.B.A (Study Before Appear) কাজ সম্পন্ন করণ।
  7.  সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন।
  8.  শিক্ষার্থীর উদ্ভাবনী মনোযোগ।
  9.  মূল্যবোধ সৃষ্টি করা।
  10.  নৈতিক আর্দশ প্রতিষ্ঠা করন।
  11.  প্রগতিশীল চেতনা জাগ্রত করন।
  12.  প্রতিষ্ঠানিক জ্ঞানচর্চার মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করা।
  13.  যর্থাথ উপকরন ব্যবহার।
  14.  স্বচ্ছতা ও জবাবদীহিতা সুনিশ্চিত করণ।
  15.  শিক্ষা-শিক্ষণ বান্ধব পরিবেশ তৈরি করণ।
  16.  নিরপেক্ষ মূল্যায়ন, ফলাফল তৈরি করণ ও সময়মত প্রকাশ করণ।
  17.  শিক্ষার্থীর তত্তাবধান করণ।
  18.  স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন করণ।
  19.  একীভূত শিক্ষার বাস্তবায়ন।
  20.  জেন্ডার চেতনা সমপ্রসারণ করণ।
  21.  প্রশাসনিক নিয়নীতি পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করন।
  22.  মোবাইল, মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহ কুফল সচেতন করা।
  23.  কভিড ১৯ ও সংক্রামনব্যাধি ও স্বাস্থ্য সচেতন সম্পর্কে বিষয়ে সচেতন করন।

শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর সংগে সম্পর্ক

  1.  বন্ধত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
  2.  সৌহার্দপূর্ণ সর্ম্পক।
  3.  সহযোগীতা মূলক দৃষ্টিভঙ্গি।
  4.  সুনির্দেশনার সম্পর্ক।
  5.  শৃংখলা অনুশীলনের প্রেরণা।
  6.  কোমলয়ী নিয়ন্ত্রনের চেতনা।
  7.  প্রশ্ন উত্তরের চেতনা।
  8.  জ্ঞানের আদান-প্রদানে দৃষ্টি ভঙ্গি।
  9.  নিরপেক্ষ সাহায্যের সম্পর্ক।
  10.  ধর্মীয় চেতনায় উজ্জীবিত করার চেতনা।
  11.  ব্যাক্তিত্ব বিকাশের সম্পর্ক।
  12.  আগ্রহ ও মনোযোগ বৃদ্ধির সম্পর্ক।
  13.  শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তি বৃদ্ধির প্রত্যয়।
  14.  পরস্পর জানার প্রবণতা।
  15.  জ্ঞানচর্চার সহযোগীতা কাজের সম্পর্ক।
  16.  দলগত কাজের চেতনা।
  17.  মূ্ল্যবোধ ও নৈতিকতা বিকাশের সম্পর্ক।
  18.  প্রেষণা জাগ্রত করার চেতনা।

শিক্ষার্থী সম্পর্কিত তথ্যাদি অবগত হওয়া

  1.  শিক্ষার্থীর আগ্রহ জানা
  2.  শিক্ষার্থীর কৌতুহল ও মনোযোগ সম্পর্কে জানা।
  3.  শিক্ষার্থীর দৃষ্টিভঙ্গি বকরখ করা।
  4.  শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানা।
  5.  শিক্ষার্থীর পারিবারিক অবস্থা জানা।
  6.  শিক্ষার্থীর আর্থসামাজিক অবস্থা জানা।
  7.  তাদের স্বাস্থ্যগত তথ্যাদি অবগত হওয়া।
  8.  তাদের শারীরিক অক্ষমতা বুঝা।
  9.  শিক্ষার্থীর বয়স, মেধাগ্রহণ ক্ষমতা জানা।
  10.  বিশেষ শিক্ষার্থীদের প্রতি দৃষ্টি রাখা ও চাহিদা সম্পর্কিত তথ্যাদি জানা।
  11.  তাদের পারদর্শিতা জানা।
  12.  শিক্ষার্থীর অভ্যাস, রীতি ও সাংস্কৃতি সম্পর্কে জানা।

সুষ্ঠ শিক্ষাদান পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য

  1.  পদ্ধতি হবে লক্ষ্য ভিত্তিক। প্রথমে লক্ষ নির্ধারণ করে নিয়ে লক্ষ্যে অনুকুলে বিষয়বস্তু উপস্থাপন ও লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন।
  2. পদ্ধতি প্রয়োগ কখনো এলোমেলো হতে পারবে না, পদ্ধতি হতে হবে সুপরিকল্পিত।
  3. পদ্ধতি হতে হবে মনোবিজ্ঞান ভিত্তিক। শিক্ষার্থীর বয়স, সামর্থ্য, আগ্রহ ইচ্ছা ও অভিরুচি অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান বাঞ্চনীয়।
  4. শিক্ষাদান হবে কর্র্মভিত্তিক, সার্থক পদ্ধতি, সমাজ ও জীবন ভিত্তিক উপাদানের উপর গুরুত্ব আরোপ করে।
  5.  বিষয়ের ভিন্নতার উপর যেমন নজর রাখবেন, তেমনি সমগ্র শ্রেণীর শিক্ষার্থীর প্রতি দৃষ্টি সদা জাগ্রত থাকতে হবে। জানার আগ্রহী করে তুলতে হবে।
  6.  উত্তম পদ্ধতি বৈশিষ্ট্য হলো শিক্ষার্থীর মনকে যুক্তি ও চিন্তা ধর্মী করে তোলা।
  7.  শিক্ষকের প্রধান দায়িত্ব হলো বিষয় বস্তু অনুযায়ী শিখণ ফল অর্জনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বিকাশ সাধন।
  8.  মহামানবের জীবন আলোচনা করে মহৎ হওয়ার অনুপ্রাণিত করা।
  9.  সমাজ উন্নয়ন ও মানকিব গল্প বলা ও সেই অনুসারে জীবন গড়ে তোলা।
  10.  জাতীয়তা দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত করা।
x
Scroll to Top