- +880 1722 729384
- info@rsacademybd.com
- Ansar Academy, Safipur, Gazipur 1751
Table of Contents
অ্যাসাইনমেন্টঃ সিন্ধু সভ্যতার আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিশ্লেষণ পূর্বক সভ্যতার নগর পরিকল্পনার সাথে তোমার নিজ এলাকার নগর পরিকল্পনার তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন।
১। সিন্ধুসভ্যতার আবিষ্কারের কাহিনী ও ভৌগলিক অবস্থান সম্পর্কে জানা যাবে।
২। সিন্ধুসভ্যতার রাজনৈতিক, আর্থসামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থা বর্ণনা করা যাবে।
৩। সভ্যতার বিকাশে সিন্ধুভ্যতার নগর পরিকল্পনা ও ভাস্কর্যের বর্ণনা করা যাবে।
ক) সিন্ধুসভ্যতার পটভূমি বর্ণনা, ভৌগোলিক অবস্থান চিহ্নিতকরণ এবং সময়কাল নির্ণয় করা।
খ) সিন্ধুসভ্যতার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ।
গ) সিন্ধুসভ্যতার নগর (হরপ্পা মহেঞ্জোদারো) এবং তোমার নিজ এলাকার (ওয়ার্ড/উপজেলা শহর) নগর পরিকল্পনা সাদৃশ্য সৃঝনশীলতার সাথে বিশ্লেষণ করা।
ঘ) সিন্ধুসভ্যতার নগর (হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো) এবং তোমার নিজ এলাকার (ওয়ার্ড/পৌর শহর/উপজেলা শহর) নগর পরিকল্পনার বৈসাদৃশ্য বিশ্লেষণ করে ছকের মাধ্যমে তুলে ধরা।
সিন্ধু সভ্যতা ছিল একটি ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতা। এই সভ্যতার কেন্দ্র ছিল মূলত ভারতীয় উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সিন্ধু নদ অববাহিকা। সিন্ধু নদের অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল বলে এই সভ্যতার নাম রাখা হয় সিন্ধুসভ্যতা। সিন্ধু সভ্যতার সংস্কৃতিকে অনেক সময়ে হরপ্পা সংস্কৃতি বা হরপ্পা সভ্যতা বলা হয়। এই সভ্যতার আবিস্কার কাহিনী চমৎকার। পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের লারকানা মহেঞ্জোদারো শহরে উঁচু উঁচু মাটির ঢিবি ছিল।
স্থানীয় লোকেরা বলত মরা মানুষের ঢিবি (মহেঞ্জোদারো কথাটির মানেও তাই) বাঙালি প্রত্মতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্ধ্যোপধ্যায়ের নেতৃত্বে পুরাতত্ত্ব বিভাগের লোকেরা ঐ স্থানে বৌদ্ধস্তুপের ধ্বংসাবশেষ আছে ভেবে মাটি খুঁড়তে থাকেন। অপ্রত্যাশিতভাবে বেরিয়ে আসে তাম্রযুগের নিদর্শন। একই সময়ে ১৯২২-২৩ খ্রিষ্টাব্দে দয়ারাম সাহানীর প্রচেষ্টায় পাঞ্জাবের পশ্চিম দিকে মন্টোগোমারি জেলার হরপ্পা নামক স্থানেও প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়।
উপমহাদেশের প্রাচীনতম সিন্ধুসভ্যতার বিস্তৃতি বিশাল এলাকা জুড়ে। মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পাতে এই সভ্যতার নিদর্শন সবচেয়ে বেশি আবিস্কৃত হয়েছে। তা সত্ত্বেও ঐ সভ্যতা শুধু সিন্ধু অববাহিকা বা ঐ দুটি শহরের মধ্যে সীমাবন্ধ ছিল না। পাকিস্তানের পাঞ্জাব, সিন্ধু প্রদেশ, ভারতের পাঞ্জাব, রাজস্থান, শুজরাটের বিভিন্ন অংশে এই সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, পাঞ্জাব থেকে আরব সাগর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভৌগোলিক এলাকা জুড়ে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।
সিন্ধুসভ্যতার সময়কাল সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, ৩৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এ সভ্যতার উত্থান-পতনের কাল। আবার কোনো কোনা ঐতিহাসিক মনে করেন, আর্য জাতির আক্রমণের ফলে খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ১৫০০ অথবা ১৪০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সিন্ধুসভ্যতার অবসান ঘটে। তবে, মর্টিমার হুইলার মনে করেন, এই সভ্যতার সময়কাল হচ্ছে ২৫০০ থেকে ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত।
সিন্ধুসভ্যতার জনগণের রাজনৈতিক জীবন ও শাসনপ্রণালি সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা নগর বিন্যাস প্রায় একই রকম ছিল। এগুলোর ধ্বংসাবশেষ দেখে নিশ্চিতভাবে বোঝা যায় যে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী উঁচু ভিতের উপর শহরগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। শহরগুলোর এক পাশে উঁচু ভিত্তির উপর একটি করে নগরদুর্গ নির্মাণ করা হতো। চারদিক থাকত প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত। নগরের শাসনকর্তারা নগর দুর্গে বসবস করতেন। প্রশাসনিক বাড়িগরও দর্গের মধ্যে ছিল। নগরের ছিল প্রবেশদ্বার। দুর্গ বা বিরাট অট্টালিকা দেখে মনে হয় একই ধরনের কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা যুগ যুগ ধরে নগর দুটিতে প্রচলিত ছিল। এই প্রশাসন জনগণের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রন করত।
সিন্ধুসভ্যতার যুগে মানুষ সমাজবন্ধ পরিবেশে বসবাস করত। সেখানে একক পরিবার পদ্ধতি চাল ছিল। সিন্ধুসভ্যতার যুগে সমাজে শ্রেণিভিাগ ছিল। সব লোক সমান সুযোগ-সুবিধা পেতনা। সমাজ ধনী ও দরিদ্র দুই শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। কৃষকরা গ্রামে বসবাস করত। শহরে ধনী এবং শমিকদের জন্য আলাদা-আলাদা বাসস্থানের নিদর্শন পাওয়া গেছে। পোষাক-পরিচ্ছদের জন্য তারা মূলত সুতা ও পশম ব্যবহার করত। সিন্ধুসভ্যতার সমাজব্যবস্থা ছিল মাতৃতান্ত্রিক। নারীরা খুবই শৌখিন ছিল। তাদের প্রিয় অলঙ্কারের মধ্যে ছিল হার, আংটি, দুল, বিছা, বাজুবন্ধ, চুড়ি, বালা, পায়ের মল ইত্যাদি। তারা নকশা করা দীর্ঘ পোষাক করত। পুরুষরাও অলঙ্কার ব্যবহার করত।
সিন্ধুসভ্যতার অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষিনির্ভর। তাছাড়াও অর্থনীতির আর একটি বড় দিক ছিল পশুপালন। কৃষি ও পশুলাপনের পাশাপাশি মৃৎপাত্র নির্মাণ, ধাতুশিল্প, বয়নশিল্প, অলঙ্কার নির্মাণ, পাথরের কাজ ইত্যাদিতেও তারা যতেষ্ট উন্নতি লাভ করেছিল। এই উন্নতমানের শিল্পপন্য বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সেভানকার বণিকরা বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলত। বণিকদের সাথে আফগানিস্তান, বেলুচিস্তান, মধ্য এশিয়া, পারস্য, মেসোপটেমিয়া, দক্ষিণ ভারত, রাজপুতনা, গুজরাট প্রভৃতি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল।
সিন্ধুসভ্যতায় কোন মন্দির বা মঠের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। যে কারনে তাদের ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা করা সম্ভব নয়। তবে তাদের মধ্যে যে ধর্মবিশ্বাস ছিল, যে বিষয়ে সন্দেহ নেই। মন্দির বা উপাসনা গৃহের অস্তিত্ব না থাকলেও স্থানে স্থানে অসংখ্য পোড়ামাটির নারীমূর্তি পাওয়া গেছে। ধারনা করা হয়, তারা ঐ ধরণের দেবীমূর্তির পূজা করত। সিন্ধুবাসীর মধ্যে মাতৃপুজা খুব জনপ্রিয় ছিল। তাছাড়া তারা দেব-দেবী মনে করে বৃক্ষ, পাথর, সাপ এবং পশু-পাখির উপাসণাও করত। সিন্ধুবাসী পরলোকে বিশ্বাস করত। যে কারণে কবরে মৃতের ব্যবহার করা জিনিসপত্র ও অলঙ্কার রেখে দিত।
সিন্ধুসভ্যতার এলাকায় যেসব শহর আবিস্কৃত হয়েছে তার মধ্যে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সবচেয়ে বড় শহর। ঘরবাড়ি সবই পোড়ামাটি বা রোদে পোড়ানো ইট দিয়ে তৈরি। শহরগুলোর বাড়িঘরের নকশা থেকে সহজেই বোজা যায় যে, সিন্ধুসভ্যতা যুগের অধিবাসীরা উন্নত নগরকেন্দ্রিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিল। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর নগর পরিকল্পনা একই রকম ছি। নগরীর ভেতর দিয়ে চলে গেছে পাকা রাস্তা। রাস্তাগুলো ছিল সোজা। প্রত্যেকটি বাড়িতে খোলা জায়গা, কুপ ও স্নানাগার ছিল। জল নিষ্কাশনের জন্য ছোট নর্দমাগুলোকে মূল নর্দমার সাথে সংযুক্ত করা হতো। রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হতো। পথের ধারে ছিল সারিবন্ধ ল্যাম্পপোষ্ট।
সিন্ধুসভ্যতা যুগের অধিবাসীদের শিল্পবোধ সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই মৃৎশিল্পের কথা বলতে হয়। তারা কমারের চাকার ব্যবহার জানত এবং তার সাহায্যে সুন্দর মাটির পাত্র বানাতে পারত। পাত্রগুলোর গায়ে অনেক সময় সুন্দর নকশা আঁকা থাকত। তাঁতিরা বয়নলিল্পে পারদর্শী ছিল। ধাতুর সাহায্যে আসবাবপত্র, অস্ত্র এবং অলঙ্কার তৈরি করা হতো। তারা তামা ও টিনের মিশ্রণে ব্রোঞ্জ তৈরি করতে শিখেছিল। কারিগররা রুপা, তামা, ব্রোঞ্জ প্রভৃতি দ্বারা তৈজসপত্র তৈরি করত। সিন্ধুসভ্যতা যুগের অধিবাসীরা লোহার ব্যবহার জানত না। ধাতু ছাড়া দামি পাথরের সাহায্যে অলঙ্কার তৈরিও করতে পারত।
সিন্ধুসভ্যতা যুগের অধিবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ এবং চমৎকার স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন রেখে গেছে। সেখানে দুই কক্ষ থেকে পঁচিম কক্ষের বাড়ির সন্ধানও পাওয়া গেছে। আবার কোথাও দুই-তিন তলা ঘরের অস্তিত্ব আবিস্কার হয়েছে। মহেঞ্জোদারের স্থাপত্যের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো বৃহৎ মিলনায়তন যা ৮০ ফুট জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছিল। তাছাড়া বিশাল এক প্রাসাদের সন্ধান পাওয়া গেছে। হরপ্পাতে বিরাট আকারের শস্যাগারও পাওয়া গেছে। মহেঞ্জোদারোতে একটি ‘বৃহৎস্নানাহার’ এর নিদর্শন পাওয়া গেছে যার মাঝখানে বিশাল চৌবাচ্চাটি ছিল সাঁতার কাটার উপযোগী। ভাস্কর্যশিল্পেও সিন্ধসভ্যতা যুগের অধিবাসীদের দক্ষতা ছিল। পাথরে খোদিত ভাস্কর্যের সংখ্যা কম হলেও সেগুলোর শেল্পিক ও কারিগরি দক্ষতা ছিল উল্লেখ করার মতো। এ যুগে মোট ১৩টি ভাস্কর্য মূতি পাওয়া গেছে। চুনাপাথরে তৈরি একটি মূর্তির মাথা পাওয়া গেছে। মহেঞ্জোদারোতে একটি নৃত্যরত একটি নারীমূর্তি পাওয়া গেছে। এমনটি মাটির তৈরি ছোট ছোট মানুষ আর পশুমূর্তিও পাওয়া গেছে।
রাস্তাঘাটঃ সিন্ধু সভ্যতার নগরীর ভিতর দিয়ে পাকা রাস্তা ছিল। আর আমার এলাকার রাস্তাগুলোও পাকা।
জল নিষ্কাশনঃ সিন্ধু সভ্যতায় জল নিষ্কাশন এর জন্য ছোট ছোট নর্দমাগুলোকে বড় নর্দমার সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হতো। আর আমার এলাকায় যে নর্দমা রয়েছে যেগুলোকে বড় কোন ড্রেন বা খালের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
ল্যাম্পপোষ্টঃ সিন্ধু সভ্যতার হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নগরীর রাস্তার পাশে সারিবন্ধ ভাবে ল্যাম্পপোষ্ট ব্যবহার করা হতো। এমনিভাবে আমার এলাকায় পাকা রাস্তার ধারে ধারে বাতি ব্যহার করা হয়েছে যাতে করে রাতের বেলায় লোকজন স্বাচ্ছন্দ্যের চলাফেরা করতে পারে।
ঘরবাড়িঃ সিন্ধু সভ্যতার ঘরবাড়ি ছিল সবেই পোড়ামাটির আর রোদে পোড়ানো ইট দিয়ে তৈরি ছিলো। আমার এলাকায় সমস্ত বাড়ি ইটের পোড়ামাটি বা রোদে পোড়ানো ইট দিয়ে তৈরি নয় কিছু বাড়ি টিনের আবার ইটের তৈরি দালান আছে।
খোলা জায়গাঃ সিন্ধু সভ্যতার প্রত্যক বাড়িতে খোলা জায়গা ছিল। আমার এলাকায় বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে অল্প জায়গাতেই অনেক লোকের বসবাস করতে হয়। যার ফলে আমাদের প্রত্যেক বাড়িতে খোলা যায়গা রাখা সম্ভব নয়।
নিমার্ণ স্থাপনাঃ সিন্ধু সভ্যতার প্রায় সমস্ত বাড়িগুলি উঁচু ভিতের উপর নির্মিত ছিল। আমার এলাকায় তেমন কোন ঘরবাড়ি উঁচু ভিতের উপর দেখা যায় না।
এ্যাসাইনমেন্ট নম্বর-১ দেখতে এখানে ক্লিক করো।
View all